পরিবারের ঝগড়াটে জীবন শিশুদের জন্য কতটা ক্ষতিকর2025
পরিবারের ঝগড়াটে জীবন শিশুদের জন্য কতটা ক্ষতিকর2025

“পরিবারের ঝগড়াটে জীবন শিশুদের জন্য কতটা ক্ষতিকর” এই বিষয়ে একটি বাংলা প্রবন্ধ তুলে ধরা হলো:
পরিবারের ঝগড়াটে জীবন শিশুদের জন্য কতটা ক্ষতিকর
ভূমিকা
পরিবার একটি শিশুর জীবনের প্রথম বিদ্যালয়। এখানে তারা শিখে ভালবাসা, সহানুভূতি, নৈতিকতা ও আত্মবিশ্বাস। কিন্তু এই শিক্ষার জায়গাটি যদি হয় ঝগড়া, উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতায় পূর্ণ, তাহলে শিশুরা কেমনভাবে গড়ে উঠবে? পরিবারে বারবার ঝগড়া, অপমান বা শারীরিক সহিংসতা শিশুদের মানসিক, সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলে। এই প্রবন্ধে আমরা বিশ্লেষণ করব, কিভাবে ঝগড়াটে পারিবারিক পরিবেশ শিশুদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ডেকে আনে এবং কীভাবে এই ক্ষয়রোধ করা যায়।
১. মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব
(ক) উদ্বেগ ও অবসাদ
একটানা পারিবারিক ঝগড়া শিশুর মনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। ছোটরা বুঝতে শেখে না, কী ঘটছে, তবে তারা পরিবেশ থেকে আতঙ্ক অনুভব করে। ফলে তারা উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, খিটখিটে মেজাজ, এমনকি বিষণ্ণতার শিকার হয়।
(খ) আত্মমূল্যবোধের ক্ষয়
যেসব শিশু ক্রমাগত মা-বাবার ঝগড়া প্রত্যক্ষ করে, তারা প্রায়ই নিজেদের দোষী ভাবে। “আমার কারণেই মা-বাবা ঝগড়া করছে” — এই ভুল ধারণা তাদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয় এবং অপরাধবোধে জর্জরিত করে।
২. আচরণগত সমস্যা
ঝগড়াপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা বেশি দেখা যায়। তারা হয় অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক বা বিপরীতভাবে অতিমাত্রায় আত্মমুখী ও নিস্পৃহ হয়ে পড়ে।
(ক) আগ্রাসী আচরণ
যেসব শিশু পরিবারে ধমক, চিৎকার, অপমান ও হিংসা দেখে, তারা এটিকেই “নতুন স্বাভাবিক” ধরে নেয়। তাই তারা স্কুল বা বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কেও সেই আচরণে অভ্যস্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভবিষ্যতে সহিংস বা অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।
(খ) সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
অনেক শিশু পারিবারিক কলহের কারণে বাইরের জগৎ থেকে নিজেদের গুটিয়ে ফেলে। তারা বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দেয়, স্কুলে অংশগ্রহণ কমে যায় এবং একাকীত্বে ভোগে।
৩. শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব
মানসিক চাপ শিশুর দেহেও প্রভাব ফেলে। নিয়মিত ঝগড়া ও অস্থিরতা শিশুর হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট করে, যার কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
(ক) ঘুমের সমস্যা
চিন্তা ও ভয় শিশুর ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে। ঘুম ঠিকমতো না হলে তার বৃদ্ধি, স্মৃতি এবং শেখার ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়।
(খ) রোগপ্রবণতা
চিরস্থায়ী মানসিক চাপ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে। ফলে ঠান্ডা, সর্দি, পেটের অসুখ, এমনকি হজমের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়।
ঘুমের সমস্যার সাধারণ কারণ:
স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা
অতিরিক্ত মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার (বিশেষ করে রাতে)
অনিয়মিত ঘুমের রুটিন
ক্যাফেইন বা চা/কফির অতিরিক্ত গ্রহণ
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন: বিষণ্ণতা, উদ্বেগ)
শরীরিক রোগ বা ব্যথা
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ঘুম ভালো করার সহজ উপায়:
১. নিয়মিত ঘুমের রুটিন তৈরি করুন:
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান ও উঠুন—even ছুটির দিনেও।
২. স্ক্রিন টাইম কমান:
ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ ব্যবহার বন্ধ করুন।
৩. ক্যাফেইন ও ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন:
বিকেলের পর চা/কফি না খাওয়াই ভালো।
ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে হালকা খাবার খান।
৪. রিলাক্সেশন বা মেডিটেশন করুন:
ঘুমানোর আগে ১০–১৫ মিনিট মেডিটেশন, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা হালকা স্ট্রেচিং করুন।
৫. ঘরের পরিবেশ ঠিক রাখুন:
ঘর যেন অন্ধকার, ঠাণ্ডা ও নিরব হয়।
নরম বালিশ, আরামদায়ক বিছানা ব্যবহার করুন।
চিকিৎসার প্রয়োজন কবে?
যদি:
একটানা ২ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ঘুম না আসে,
ঘুমের অভাবে দিনের বেলা ক্লান্ত লাগে বা কাজ করতে সমস্যা হয়,
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ জেগে ওঠেন বা দুঃস্বপ্ন হয়,
তখন একজন চিকিৎসক বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৪. শিক্ষাগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা
একজন শিশু যখন পারিবারিক কলহে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। তার শেখার আগ্রহ কমে যায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
(ক) পড়াশোনায় মনোযোগের অভাব
ঝগড়ার আওয়াজ বা মানসিক চাপ শিশুদের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তারা শ্রেণিকক্ষে বসে থেকেও পড়ায় মন বসাতে পারে না।
(খ) ফলাফলের অবনতি
শিক্ষাগত সাফল্যের জন্য স্থির মন ও নিরাপদ পরিবেশ প্রয়োজন। যখন পরিবারে প্রতিনিয়ত বিবাদ চলে, তখন শিশুর ফলাফল ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।
৫. সম্পর্ক গঠনের সক্ষমতা
যেসব শিশু অশান্ত পরিবারে বড় হয়, তারা ভবিষ্যতে সম্পর্ক গঠনের সময় দ্বিধাগ্রস্ত হয়। ভালোবাসা, বিশ্বাস ও বন্ধনের ধারণা তাদের মাঝে অস্পষ্ট হয়ে যায়।
(ক) রোমান্টিক ও পারিবারিক সম্পর্কে সমস্যা
অনেক সময় দেখা যায়, এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা বড় হয়ে নিজেরা সম্পর্ক তৈরি করতে ভয় পায় বা সহিংস আচরণকে গ্রহণযোগ্য মনে করে।
(খ) বিশ্বাসের ঘাটতি
যেহেতু তারা নিজ চোখে সম্পর্কের ভাঙন দেখেছে, তাই তারা মনে করে — “সব সম্পর্কেই সমস্যা আছে”, ফলে তারা কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে পারে না।
৬. ভবিষ্যতের মানসিক ব্যাধি ও আসক্তি
পরিবারের ঝগড়া কেবল তাৎক্ষণিক নয়, ভবিষ্যতের জন্যও বিপজ্জনক। অনেক শিশু পরবর্তী জীবনে মানসিক ব্যাধি যেমন পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD), অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, ও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়। কেউ কেউ মাদক বা অ্যালকোহলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।
৭. শিশুর দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধে বিকৃতি
পরিবারের ঝগড়া শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। তারা সম্পর্ককে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে এবং সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতাকে স্বাভাবিক ভাবতে শেখে।
(ক) সহিংসতা ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য শেখা
যদি পরিবারে বাবা মাকে বা মা বাবাকে নিয়মিত গালমন্দ করে, তাহলে শিশু ধরে নেয় এই আচরণই স্বাভাবিক। ফলে ভবিষ্যতে তারাও সেই প্যাটার্ন অনুসরণ করে।
(খ) নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
ঝগড়ার পরিবেশে শিশুদের মন হতাশায় ভরে ওঠে। তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী থাকতে পারে না এবং অনেকেই জীবনের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে।
“নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি” উপশিরোনামটির একটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো, যা মূল প্রবন্ধের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে:
নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
ঝগড়াপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের মানসিক গঠনে একটি বড় পরিবর্তন ঘটে — তারা জীবন ও সম্পর্ক সম্পর্কে একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে শুরু করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু তাদের শৈশব নয়, কৈশোর ও পরবর্তী প্রাপ্তবয়স্ক জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলে।
(ক) আশাবাদ হারিয়ে ফেলা
শিশু যখন দেখে যে তার ঘরেই বারবার দ্বন্দ্ব, চিৎকার, অপমান হচ্ছে — তখন তার মনে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়। সে বিশ্বাস করতে শেখে না যে “সব কিছু ভালো হবে”, বরং ভাবে, “জীবন মানেই সমস্যা”। এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা আশাবাদ ও আত্মপ্রত্যয়ের শক্তি হারাতে থাকে।
(খ) সমাজ ও সম্পর্ক নিয়ে অবিশ্বাস
পরিবারে যদি শিশুর সামনে বিশ্বাস ভঙ্গ, প্রতারণা বা অবহেলার ঘটনা ঘটে, তাহলে সে ভবিষ্যতে অন্য মানুষের প্রতি সহজে বিশ্বাস রাখতে পারে না। সে মনে করে — “সব সম্পর্কেই মিথ্যা বা দ্বন্দ্ব আছে”, ফলে সে আত্মিকভাবে বন্ধ হতে চায় না।
(গ) নিজেকে তুচ্ছ ভাবা
নেতিবাচক পরিবেশে বড় হওয়া অনেক শিশু নিজেদের অযোগ্য, অবাঞ্চিত বা অপূর্ণ মনে করে। এই মানসিকতা আত্মমূল্যবোধকে ধ্বংস করে এবং দীর্ঘমেয়াদে হতাশা ও আত্মগ্লানির জন্ম দেয়।
(ঘ) সহিংসতা ও শত্রুতা স্বাভাবিক মনে করা
যদি শিশু প্রতিদিন দেখে যে কথাবার্তা মানে চিৎকার, মতভেদ মানে মারধর — তাহলে সে এটাকেই সামাজিক আচরণের স্বাভাবিক রূপ ধরে নেয়। ভবিষ্যতে, সে নিজেও সংকটময় মুহূর্তে সহিংস আচরণ বেছে নেয়।
(ঙ) জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক দার্শনিকতা
অনেক শিশুর ভেতরে জন্ম নেয় এক ধরনের কুপ্রবণতা — “জীবন অর্থহীন”, “সবাই শুধু নিজের কথা ভাবে”, “ভালো কিছু আমি পাই না” ইত্যাদি চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাদের প্রেরণা, সৃজনশীলতা এবং উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সমাধান কী?
এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য পরিবারকে হতে হবে সহানুভূতিশীল ও সংবেদনশীল। প্রাপ্তবয়স্কদের উচিত, তাদের আচরণ দিয়ে শিশুদের শেখানো যে— সম্পর্ক মানে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। শিশুর সামনে মানবিকতা ও ইতিবাচক মানসিকতার উদাহরণ তৈরি করলেই তারা একটি আশাবাদী মন নিয়ে গড়ে উঠতে পারে।
৮. আত্মহত্যার প্রবণতা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু পরিবারে নির্যাতনের শিকার বা চাক্ষুষ সাক্ষী, তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। তারা জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং মনে করে, মৃত্যু হয়তো একমাত্র মুক্তি।
করণীয়: ঝগড়াটে পরিবেশ থেকে শিশুদের রক্ষা
১. খোলামেলা যোগাযোগ
শিশুর সঙ্গে কথা বলুন, তার অনুভূতি জানার চেষ্টা করুন।
২. বিচার-বিবেচনা করে ঝগড়া করুন
শিশুর সামনে না ঝগড়া করাই শ্রেয়। প্রয়োজনে অন্য ঘরে বা পরে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।
৩. পরিবারে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন
একসঙ্গে খেলাধুলা, গল্প করা, খাওয়া দাওয়া — এসব শিশুদের নিরাপত্তা ও ভালোবাসার অনুভব দেয়।
৪. মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করুন
দাম্পত্য কলহ বা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কাউন্সেলিং নিতে দ্বিধা করবেন না।
৫. শিশুর মানসিক অবস্থার প্রতি যত্নবান হন
তার আচরণ, মনোযোগ, ঘুম, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদিতে পরিবর্তন দেখলেই মনোবিদের সহায়তা নিন।
“শিশুর মানসিক অবস্থার প্রতি যত্নবান হন” উপশিরোনামটি আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো, যাতে পাঠক সহজে বোঝেন কীভাবে শিশুর মানসিক অবস্থা লক্ষ্য করা এবং তার যত্ন নেওয়া যায়:
শিশুর মানসিক অবস্থার প্রতি যত্নবান হন
শিশুরা সবসময় মুখ ফুটে তাদের অনুভূতির কথা বলতে পারে না। বিশেষ করে যখন তারা মানসিক চাপে থাকে বা পারিবারিক অশান্তির শিকার হয়, তখন তাদের ভেতরের কষ্ট নিঃশব্দে বেড়ে চলে। অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো, শিশুর আচরণ, মেজাজ ও দৈনন্দিন অভ্যাসের দিকে নজর রাখা এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
(ক) আচরণগত পরিবর্তন খেয়াল করুন
যদি শিশু হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যায় বা অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে, তবে এটি মানসিক চাপের ইঙ্গিত হতে পারে।
খেলাধুলা, পড়াশোনা বা প্রিয় কাজগুলো থেকে দূরে সরে গেলে তা অবহেলা করা ঠিক নয়।
ঘন ঘন কান্নাকাটি, রাগান্বিত হওয়া বা ভয়ের অভিব্যক্তিও মানসিক অস্বস্তির লক্ষণ হতে পারে।
(খ) শিশুর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলুন
প্রতিদিন সময় নিয়ে শিশুর সঙ্গে কথা বলুন — সে কেমন আছে, তার দিন কেমন কাটল ইত্যাদি জানতে চান।
তাকে অনুভব করান, সে যে কোনো কিছু আপনাকে বলতে পারে এবং আপনি তার পাশে আছেন।
(গ) নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন
শিশুর জন্য একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। পরিবারে মতবিরোধ থাকলেও তা যেন শিশুর উপর চাপ তৈরি না করে।
শিশুর সামনে গালিগালাজ, চিৎকার বা অপমানজনক আচরণ পরিহার করুন।
(ঘ) ভালো ব্যবহার প্রশংসা করুন
যখন শিশু ইতিবাচক কোনো কাজ করে, তখন তাকে প্রশংসা করুন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
শাস্তির বদলে উৎসাহ ও সহানুভূতিকে প্রাধান্য দিন।
(ঙ) পেশাদার সহায়তা গ্রহণ করুন
যদি মনে হয় শিশুর মানসিক সমস্যা গভীর হয়ে যাচ্ছে — যেমন: ঘুমের সমস্যা, খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা, নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা ইত্যাদি, তাহলে মনোবিজ্ঞানী বা শিশু মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
স্কুল কাউন্সেলর, শিশুর শিক্ষক, বা শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেয়াও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
(চ) শিশুকে সৃজনশীলতায় ব্যস্ত রাখুন
ছবি আঁকা, গান গাওয়া, গল্প লেখা, বাগান করা ইত্যাদি সৃজনশীল কাজ শিশুর মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
শিশুকে তার অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দিন, তা সে শিল্পের মাধ্যমে হোক কিংবা কথার মাধ্যমে।
মোট কথা, শিশুর মানসিক অবস্থা বুঝে তাকে ভালোবাসা, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার অনুভূতি দেওয়াই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আমাদের অসতর্ক আচরণ যেন শিশুদের জীবনের ছায়া না হয়ে দাঁড়ায় — সেদিকে সবারই খেয়াল রাখা উচিত।
চাইলে আমি এই অংশটিকে সংযুক্ত করে পুরো প্রবন্ধের হালনাগাদ সংস্করণ তৈরি করে দিতে পারি। জানালে আমি সেটি প্রস্তুত করে দিই।
উপসংহার
পরিবার শিশুর জীবনের ভিত্তি। এই ভিত্তিটি যদি অশান্ত, কলহপূর্ণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে গঠিত হয়, তাহলে সেই শিশুর জীবন হবে দুর্ভাগ্যের। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হলে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন শিশুর সামনে সহিংস, অপমানজনক বা আতঙ্কজনক না হয় — সেটিই আমাদের সচেতনতার মূল অংশ হওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, একটি অশান্ত ঘর কেবল একটি শিশুর নয়, একটি সমাজের ভবিষ্যৎকেও অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে।
gulsganmedia.com- 01711246075