যে কারণে বিয়ে করা গুরুত্বপূর্ণ ২০২৩
যে কারণে বিয়ে করা গুরুত্বপূর্ণ ২০২৩

বিয়ে একটি সামাজিক, ধর্মীয় ও মানবিক সম্পর্কের প্রতীক। এটি শুধু দুটি মানুষের একত্রে বসবাস নয়, বরং দুটি হৃদয়, দুটি পরিবার এবং কখনো কখনো দুটি ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে একটি বন্ধন তৈরি করে। বিয়ে মানব সমাজের একটি প্রাচীন ও মৌলিক প্রতিষ্ঠান। যুগে যুগে সভ্যতার পরিবর্তন ঘটলেও বিয়ের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিবর্তিত থেকেছে। বর্তমান যুগে অনেকেই বিয়েকে বিলাসিতা বা প্রয়োজনহীন ভাবতে শুরু করলেও বাস্তবতা হলো—মানুষের মানসিক, শারীরিক, সামাজিক এবং আত্মিক শান্তির জন্য বিয়ে অপরিহার্য।
১. বিয়ের ধর্মীয় গুরুত্ব
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে
ইসলামে বিয়েকে একটি পূণ্যময় ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে দেখা হয়। কোরআন এবং হাদিসে বিয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বহুবার বলা হয়েছে। ইসলামে বিয়ের মাধ্যমে পুরুষ ও নারী বৈধ উপায়ে একত্রে জীবন যাপন করে। এতে পাপ থেকে বাঁচা যায় এবং পারিবারিক কাঠামো সুসংহত থাকে।
“আর তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্যতম এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও, এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়ালুতা সৃষ্টি করেছেন।”
— (সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“বিয়ে আমার সুন্নত। কেউ যদি আমার সুন্নতকে অনুসরণ না করে, তবে সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।”
— (বুখারী ও মুসলিম)
অন্যান্য ধর্মেও বিয়ের গুরুত্ব
- হিন্দুধর্মে বিয়ে হলো একধরনের পবিত্র ধর্মীয় বন্ধন। এটি “সপ্তপদী” বা সাতটি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং এটি শুধু এই জীবনের জন্য নয়, পরজন্ম পর্যন্ত একত্র থাকার অঙ্গীকার।
- খ্রিস্টধর্মে বিয়ে হলো একটি পবিত্র চুক্তি, যা ঈশ্বরের সামনে সম্পাদিত হয়। এটি পাপ থেকে বিরত থাকার একটি মাধ্যমও।
২. সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বিয়ের প্রয়োজন
পরিবার গঠনের ভিত্তি
বিয়ে হলো একটি পরিবারের সূচনা। পরিবার একটি সমাজের প্রাথমিক একক। যখন একজন পুরুষ ও একজন নারী বিয়ে করে, তখন তারা সন্তান ধারণ ও পালন করে, একটি নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াই সমাজকে টিকিয়ে রাখে।
নৈতিকতা ও সংযম বজায় রাখা
অবিবাহিত জীবনে মানুষ অনেক সময় অনিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ, ব্যভিচার বা সমাজবিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। বিয়ে একজনকে বৈধ এবং নৈতিক পথে প্রবেশ করায়, যার মাধ্যমে তার চারিত্রিক ও সামাজিক জীবন স্থিতিশীল হয়।
সমাজে ভারসাম্য সৃষ্টি
বিয়ে সমাজে নারী-পুরুষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি নারীকে সুরক্ষা দেয়, পুরুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে। সমাজে একক অভিভাবকত্ব, অনাথ শিশু, অসুস্থ সম্পর্ক—এসব সমস্যার মূল সমাধান অনেক সময় সঠিক বয়সে বিয়ের মাধ্যমেই সম্ভব।
৩. মানসিক ও আবেগিক স্বস্তির জন্য বিয়ের গুরুত্ব
সঙ্গী থাকা জীবনের সুখ বাড়ায়
মানুষ মূলত একাকীত্ব সহ্য করতে পারে না। একজন স্থায়ী সঙ্গী থাকলে জীবনের দুঃখ-কষ্ট, চাপ ও হতাশা সহজে কাটানো যায়। সুখের মুহূর্তগুলো ভাগ করে নেওয়া যায়। একজন জীবনসঙ্গী মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের উৎস।
আত্মিক বন্ধন গড়ে ওঠে
বিয়ের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি এমন একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে যেখানে সে খোলামেলা অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে, নির্ভর করতে পারে, এবং নিজেকে নিঃসন্দেহে প্রকাশ করতে পারে।
ডিপ্রেশন ও মানসিক রোগ হ্রাস পায়
গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা, আত্মহত্যার প্রবণতা, একাকীত্ব ইত্যাদির হার অবিবাহিত বা বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক কম।
৪. শারীরিক ও যৌন জীবনের জন্য বিয়ের ভূমিকা
বৈধ যৌন সম্পর্ক ও শারীরিক তৃপ্তি
বিয়ে মানুষকে একটি বৈধ ও সম্মানজনক যৌন জীবন প্রদান করে। এটি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নৈতিকতার দিক থেকেও সমাজে গ্রহণযোগ্যতা দেয়।
শারীরিক রোগ থেকে রক্ষা
অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্ক বহু যৌনবাহিত রোগের জন্ম দেয় যেমন: এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি। বিয়ের মাধ্যমে একজন স্থায়ী সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করায় এসব ঝুঁকি অনেকাংশে কমে।
৫. সন্তান জন্ম ও লালন–পালনের সঠিক কাঠামো
সন্তানের পরিচয় ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা
বিয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তান সামাজিকভাবে পরিচিতি পায়, একটি দায়িত্বশীল মা-বাবার পরিচয়ে বেড়ে ওঠে। এতে তার আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক অবস্থান দৃঢ় হয়।
সুশিক্ষা ও নীতিবোধ গঠনে সহায়ক পরিবেশ
বিবাহিত মা-বাবার কাছ থেকে সন্তান সুশিক্ষা, মূল্যবোধ ও সামাজিক আচরণ শেখে। এর বিপরীতে অবৈধ বা একক অভিভাবকত্বে সন্তান বেড়ে উঠলে অনেক সময় সঠিক দিকনির্দেশনা পায় না।
৬. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দায়িত্ববোধের জন্ম
দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়
বিয়ে একজন মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে। সে শুধু নিজের জন্য নয়, স্ত্রী বা স্বামীর জন্য, ভবিষ্যতের সন্তানদের জন্যও চিন্তা করতে শেখে। এতে করে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা
বিবাহিত জীবন শুধু একতরফা ব্যয় নয়, বরং যৌথভাবে আয় ও ব্যয়ের মাধ্যমে একটি সুসংহত আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলা যায়। স্ত্রী চাকরি করলে সে স্বামীর সহায় হতে পারে, আবার গৃহস্থালি দেখভাল করে ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৭. সমাজের ভবিষ্যৎ গঠনে বিয়ের অবদান
শৃঙ্খলিত প্রজন্ম তৈরি
সুস্থ দাম্পত্য জীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করে। একটি ভালো পরিবার ভালো নাগরিক তৈরি করে, আর ভালো নাগরিক সুস্থ সমাজের ভিত্তি।
মানবিকতা ও সহনশীলতা শেখানো
বিয়ে মানুষকে ত্যাগ, ধৈর্য, সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা শেখায়। এই গুণগুলো কেবল দাম্পত্য সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সামাজিক জীবনেও প্রভাব বিস্তার করে।
৮. আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জ ও বিয়ের প্রয়োজনীয়তা
পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে বিয়ের প্রতি অনীহা
আজকের প্রজন্মের অনেকেই মনে করে বিয়ে মানে স্বাধীনতার ক্ষয়, দায়িত্বের বেড়াজাল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দীর্ঘমেয়াদে তারা একাকীত্ব, দুশ্চিন্তা, অনিরাপত্তা, এবং সম্পর্কহীন জীবনে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে।
বিকল্প সম্পর্কের ঝুঁকি
লিভ-ইন রিলেশন বা “ওপেন রিলেশনশিপ” ইত্যাদি বিকল্প মডেলগুলো সঙ্গীর প্রতি দায়বদ্ধতা হ্রাস করে, সম্পর্ককে অস্থির করে তোলে। এর ফলে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, মানসিক যন্ত্রণা, সন্তানদের অস্থিরতা বাড়ে।
টেকসই সম্পর্কের জন্য আইনি ও সামাজিক স্বীকৃতি দরকার
বিয়ে হলো একটি সামাজিক ও আইনি বন্ধন, যা উভয় পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি স্ত্রী বা স্বামী উভয়ের অধিকার নিশ্চিত করে এবং বিচ্ছেদ হলেও সম্পত্তি, সন্তানের অধিকার ইত্যাদি সুরক্ষিত থাকে।
বিয়েকে বর্তমানে সেকেলে প্রথা বলে মনে করছেন অনেকেই। তরুণ-তরুণীরা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অবিবাহিত’ থাকতে রক্ষণশীল ও ‘পছন্দসই বিয়ের’ সন্ধান করছেন।
কিন্তু ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সমাজ এখনো বিশ্বাস করে, প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে পরিবার অপরিহার্য একটি বিষয়। আর সেই পরিবার তৈরি হয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে।
বিয়ের সুবিধা-অসুবিধা উভয়ই রয়েছে। এতে ইতিবাচক দিকই বেশি। কেননা মিলটা যদি সুখের হয় তাহলে ওই দম্পতি আর্থিক সুবিধা, মানসিক সমর্থন ও ভালো স্বাস্থ্য পেতে পারেন। এছাড়া বিয়ের পরও ওই দম্পতির সন্তানরা অনেক সুখী ও মানসিকভাবে স্বাস্থ্যসম্মত হবেন।
বিয়ের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। সেই উপকারিতাগুলো উপস্থাপন করছে বাংলা নিউজ।
দীর্ঘ জীবন
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অল্প বয়সে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে অবিবাহিতদের সংখ্যা বিবাহিতদের দ্বিগুণ। কারণ স্বামী-স্ত্রীরা প্রয়োজন হলে একে অপরের ভালো যত্ন নিতে পারেন। এছাড়া সহযোগীদের সমর্থন ও সাহায্যও পেতে পারেন। ফলে বিবাহিতরা নিজেদের যত্ন নেওয়ার জন্য দম্পতির প্রতি দায়িত্ববোধ ও বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবেন। তারা বুঝতে পারেন যে, প্রয়োজন পড়লে সহায়তা করার জন্য তাদের কেউ একজন রয়েছেন। তাই কেউ দীর্ঘজীবী হতে চাইলে তাকে বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছেন অভিজ্ঞরা।
তবে সত্যিকারের আদর্শ জীবনসঙ্গী না পেয়ে বিয়ে করলে সেটা চরম ভুল হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
নিজের দেখাশোনা
বিবাহিত নারী-পুরুষ স্বাস্থ্যবান বলে পরিসংখ্যানের ফলাফলে দেখা যায়। দম্পতিরা তাদের প্রিয়তমের প্রতি দায়িত্ব অনুভব করে খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করে নিজের সর্বচ্চ যত্ন নেওয়া শুরু করেন, যা তাকে স্বাস্থ্যবান ও দীর্ঘজীবী হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে সেটা দাম্পত্য জীবনে ভাঙনের সৃষ্টি করে। এর ফলে সংসার জীবন সংক্ষিপ্ত হতে পারে, যার ক্ষতিকর প্রভাবে নষ্ট হতে পারে তাদের স্বাস্থ্য। সুতরাং, অনুরোধের কারণে বিয়ে না করে আনন্দের সঙ্গে স্বেচ্ছায় বিয়ে করা, বিবাহিত জীবনকে উপভোগ করা, সঙ্গীকে ভালোবাসা, সর্বপরি ভালোবাসায় ফিরে আসা মন ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি।
যৌন জীবনে রোগের ঝুঁকি কম

যেসব দম্পতি একে অপরকে ভালোবাসেন ও বিশ্বাস করেন তারা প্রতিনিয়ত যৌনসুখ উপভোগ করেন। ফলে তাদের যৌনসঙ্গী খোঁজার প্রয়োজন হয় না। এতে তাদের যৌনজীবনে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কম থাকে।
তবে যে দম্পতি এর ব্যতিক্রম ঘটায় এবং একে অপরের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের যৌনরোগ সংক্রান্ত ঝুঁকি বেশি থাকে।
ভালো স্বাস্থ্য
বিয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত অনেক সুবিধা পান দম্পতিরা। তবে নারীরা এ সুবিধা বেশি ভোগ করেন। কেননা ভালো যৌনজীবন তাদের সন্তুষ্টি ও সুখের একটি সম্পূর্ণ অনুভূতি প্রমাণ করে। এই সাময়িক মানসিক অবস্থা শারীরিক স্বাস্থ্যের চেয়ে মানসিক স্বাস্থ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে বলে গবেষণায় জানা যায়।
গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে, অবিবাহিতদের মন-মেজাজ সব সময় দোল খেতে থাকে, স্থির হতে পারে না। এমনকি সব সময় বিষণ্নতায়ও ভোগেন তারা। এর ফলে অবিবাহিতদের স্থাস্থ্যের ওপর অনেক খারাপ প্রভাব পরে।
স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান
শুধু নারীরাই নয়, বিবাহিত নারী-পুরুষ উভয়েই মানসিক ও আবেগগতভাবে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারেন। কারণ তারা একে অপরের পছন্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী যত্ন নিতে পারেন। এটা পুরুষের হৃৎপিণ্ডের জন্য খুবই উপকারী। তাই অবিবাহিত পুরুষদের তুলনায় বিবাহিতদের স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও অন্য রোগের ঝুঁকি কম থাকে বলে গবেষণায় দেখা যায়।
আর্থিক অবস্থার সমৃদ্ধি
অবিবাহিত ব্যক্তি বিবাহিত দম্পতিদের তুলনায় টাকা কম খরচ করে এটা অবশ্যই সত্য। তবে দম্পতিরা একত্রে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারেন এবং তাদের আর্থিক অবস্থাও অনেক সমৃদ্ধ হয়।
অন্যদিকে অবিবাহিতরা কম উপার্জনেই তাদের জীবনধারণ করতে পারেন। তাই ভালো কাজ ও বেশি উপার্জনের লক্ষ্যও তাদের কম থাকে। কিন্তু বিবাহিত পুরুষরা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব অনুভব করে আর্থিক অবস্থার উন্নতি করার চেষ্টা চালিয়ে যান এবং সফল হন।
খারাপ খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ
গবেষণায় দেখা যায় যে, বিবাহিতরা তাদের পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে মদ বা ড্রাগের মতো খারাপ অভ্যাস থেকে অনেক সহজেই পরিত্রাণ পেতে পারেন। অনেকে তাদের দম্পতি ও সন্তানদের কারণে ধূমপানও ছেড়ে দেন।
অন্যদিকে একজন সঙ্গীহীন ব্যক্তি তার এই আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ এই খারাপ অভ্যাসগুলো একক প্রচেষ্টায় ত্যাগ করা খুবই কঠিন
সন্তানদের যত্ন নেওয়া সহজ
কেউ যদি একা না হয়, বরং তাদের যদি জীবনসঙ্গী থাকে তাহলে তাদের বাড়ন্ত শিশুদের যত্ন নেওয়া অনেক সহজ হয়। আর যে বাবা-মায়েরা তাদের শিশুদের দায়িত্ব ভাগ করে পালন করেন তারা সন্তানদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করেন।
এর মাধ্যমে ওই দম্পতির সন্তানরা প্রকৃত পারিবারিক সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে পারেন, যা তাদের ভবিষ্যৎ পারিবারিক জীবনে সুখের বন্ধন তৈরি করে।
পরিপূরক জীবন
বিয়ের পর থেকে যেহেতু একটি দম্পতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বাড়ে, সেহেতু জীবনযাত্রারও উন্নতি ঘটে। ফলে তারা একটি সুন্দর স্থানে রুচিশীল বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। এছাড়া তাদের সন্তানদের জন্য ভ্রমণ, ভালো খাবার ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করারও সামর্থ্য তৈরি হয় ওই দম্পতির।
আজীবন সাহচর্য
সম্পর্কের ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া একটি মহৎ ব্যাপার। কেননা বর্তমানে কারো কাছ থেকে যত্ন ও বিপদে সাহায্য গ্রহণ করা পুরস্কার পাওয়ার মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কোনো ব্যক্তি বিয়ে করার মাধ্যমেই এই শাশ্বত আশীর্বাদ পেতে পারেন। কারণ বিয়েতে ওই শাশ্বত গুণাবলি রয়েছে। এছাড়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ওই দম্পতি সব সময় প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়ে থাকেন।
ফলে সবারই স্বপ্ন থাকে যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে একজন বিশেষ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে এবং তার সঙ্গেই বাকিটা জীবন অতিবাহিত হবে। এটা সত্যি যে পারিবারিক জীবন মানুষের বেঁচে থাকার এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎস।
উপসংহার
বিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনের ভিত্তি। এটি শুধু ভালোবাসার সম্পর্ক নয়, বরং দায়িত্ব, কর্তব্য, সহযোগিতা, ত্যাগ এবং আত্মিক বন্ধনের প্রতীক। মানুষের জীবনে শান্তি, স্থিতিশীলতা, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুষ্ঠু গঠনের জন্য বিয়ে অপরিহার্য।
যারা মনে করেন, “বিয়ে ছাড়াও জীবন চলে”—তারা হয়তো তাৎক্ষণিক স্বাধীনতা উপভোগ করেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে একাকীত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং মানসিক অশান্তি তাদের ঘিরে ধরে। পক্ষান্তরে যারা সঠিক বয়সে, সঠিক সঙ্গীর সঙ্গে বিয়ে করে—তারা একজন পূর্ণাঙ্গ, দায়িত্বশীল, এবং সুখী মানুষ হিসেবে জীবন কাটাতে পারেন।
তাই বিয়ে শুধু একটি রীতি নয়, এটি জীবনের প্রয়োজন। আসুন, আমরা সবাই বিয়েকে গুরুত্ব দিই এবং সমাজে সুস্থ, সুন্দর ও নৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলি।