সোস্যল মিডিয়া মানব জীবনে বিয়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কতটুকু2025
সোস্যল মিডিয়া মানব জীবনে বিয়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কতটুকু2025

“সোশ্যাল মিডিয়া মানব জীবনে বিয়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কতটুকু বিশ্লেষণধর্মী বাংলা আর্টিকেল দেওয়া হলো:
সোশ্যাল মিডিয়া মানব জীবনে বিয়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কতটুকু
ভূমিকা
সোস্যল মিডিয়া বর্তমান যুগ প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের যুগ। এই প্রযুক্তি বিপ্লবের সবচেয়ে শক্তিশালী ফলাফল হলো সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাটসহ অসংখ্য প্ল্যাটফর্ম আজ আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। যদিও এই মাধ্যমগুলো যোগাযোগ, ব্যবসা, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে, তবে এর নেতিবাচক প্রভাবও অনস্বীকার্য। বিশেষ করে পারিবারিক সম্পর্ক, তার মধ্যে বিবাহিত জীবন—সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে এবং কতটা পরিমাণে সোশ্যাল মিডিয়া মানব জীবনে, বিশেষ করে বিবাহিত জীবনে, ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার
বর্তমান সমাজে প্রায় প্রতিটি বয়সের মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। স্ট্যাটিসটিক্স বলছে, বাংলাদেশে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি এবং তার বেশিরভাগই সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে, অবসর সময়ে বা এমনকি পারিবারিক সময়েও মোবাইলে ডুবে থাকে। এই ‘ডিজিটাল আসক্তি ধীরে ধীরে একে অপরের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বাস ও সন্দেহ: সম্পর্কের ভিত্তি দুর্বল হওয়া
বিয়ের সম্পর্ক বিশ্বাসের উপর গড়ে ওঠে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার ‘গোপন বার্তা’, ‘প্রাইভেট চ্যাট’, ‘বন্ধুত্বের অনুরোধ’, কিংবা ‘লাইক-কমেন্ট -এর মতো বিষয়গুলো অনেক সময় সন্দেহ ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে। কেউ যদি নিয়মিতভাবে বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ রাখে বা অপ্রাসঙ্গিক ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে, তবে তার জীবনসঙ্গী অনিরাপদ বোধ করতেই পারে। ফলে সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিবাহবিচ্ছেদের একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে ডিজিটাল বিশ্বাসঘাতকতা। কোনো পক্ষ যদি ভার্চুয়াল সম্পর্ক গোপনে বজায় রাখে, তবে তা ধীরে ধীরে বিবাহিত জীবনে ধ্বংস ডেকে আনে।

মানসিক চাপ ও একাকীত্ব
সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার দাম্পত্য জীবনে মানসিক চাপ বাড়ায়। অনেকেই নিজের সঙ্গীর পরিবর্তে ভার্চুয়াল বন্ধুবান্ধবের সান্নিধ্যে বেশি স্বস্তি পায়। এই মানসিক দূরত্বই ধীরে ধীরে একজনের মধ্যে একাকীত্ব তৈরি করে।
যখন কোনো পক্ষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকে এবং বাস্তব জীবনের অংশীদারকে অবহেলা করে, তখন অপর পক্ষ নিজেকে অবমূল্যায়িত বোধ করে। এই অবহেলা ক্রমে হতাশা, রাগ এবং দাম্পত্য কলহে রূপ নেয়।
আদর্শিক বিভ্রান্তি: তুলনার সংস্কৃতি
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত মানুষ তার সুখ, সম্পদ, দাম্পত্য সুখ, ঘোরাঘুরি ইত্যাদির ছবি শেয়ার করে। এগুলো দেখে অনেকেই নিজের জীবনের সাথে তুলনা করতে শুরু করে। একজন স্ত্রী যদি অন্য নারীর পোষাক, সাজ, গহনা বা ঘুরে বেড়ানোর ছবি দেখে হীনমন্যতায় ভোগে, কিংবা স্বামী যদি অন্য পুরুষের লাইফস্টাইল দেখে নিজের জীবনসঙ্গীর প্রতি অতৃপ্তি অনুভব করে, তাহলে তা দাম্পত্য জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
এই অবাস্তব ও সাজানো জীবনের ঝলকানি অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না এবং বাস্তব জীবনকে নিয়ে অসন্তোষ জন্মে।
গোপনীয়তা লঙ্ঘন: ব্যক্তিগত বিষয়ে সামাজিক প্রকাশ
অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন শেয়ার করতে ভালোবাসে। তবে দাম্পত্য জীবন সবসময়ই একটি ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল সম্পর্ক। যখন কেউ তার সঙ্গীর অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তিগত ছবি বা ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে, তখন তা সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে। স্বামী বা স্ত্রী যদি অনুভব করে যে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে, তাহলে তা হতাশা ও রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আসক্তি ও সময় ব্যবস্থাপনার অভাব
সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির ফলে অনেক দম্পতি নিজেদের জন্য যথেষ্ট সময় দেয় না। আগে যেখানে একসাথে বসে গল্প হতো, এখন সেখানে দুজনই আলাদা আলাদা মোবাইলে ব্যস্ত। এই ডিজিটাল দূরত্বই সম্পর্কের উষ্ণতা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত কথা না বলা, অনুভূতি ভাগ না করা, বা একে অপরের প্রতি যত্ন না দেখানো—এসবই সম্পর্ককে ধীরে ধীরে শীতল করে তোলে।
পরকীয়া ও বিবাহবিচ্ছেদ
সোশ্যাল মিডিয়া আজ নতুন সম্পর্ক তৈরির একটি সহজ মাধ্যম। এই মাধ্যমের মাধ্যমে অনেকেই পুরনো বন্ধু বা প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ পুনরায় শুরু করে। এমনকি অপরিচিত কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে। অনেক সময় এই ভার্চুয়াল সম্পর্ক বাস্তব সম্পর্কের চেয়েও বেশি গুরুত্ব পায়, যা পরকীয়ার দিকে গড়ায়। এই বিশ্বাসঘাতকতা একজন জীবনসঙ্গীর মনে বিশাল আঘাত আনে, এবং অনেক সময় এই কারণেই বিবাহবিচ্ছেদের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
পরকীয়া ও বিবাহবিচ্ছেদ: সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব
সোশ্যাল মিডিয়া যুগে মানুষ এখন সহজেই পুরনো বন্ধু, প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ পুনরায় শুরু করতে পারে, কিংবা একদম অচেনা কারো সঙ্গে অল্প সময়ে গড়ে তুলতে পারে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এই নতুন যোগাযোগের সুযোগ এবং গোপনীয়তার সুযোগ অনেক সময় বিবাহিত জীবনে পরকীয়ার জন্ম দেয়। যা ধীরে ধীরে বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে।
১. ভার্চুয়াল সম্পর্কের সহজলভ্যতা
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মে “ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট” পাঠানো, ইনবক্সে চ্যাট শুরু করা, কিংবা কারো পোস্টে নিয়মিত কমেন্ট করা খুব সহজ। এক সময়ের অচেনা কেউ হয়তো দিনে দিনে একজনের জীবনে আবেগের স্থান দখল করে নেয়। বিশেষ করে, যদি দাম্পত্য জীবনে মানসিক দূরত্ব বা অসন্তোষ থেকে থাকে, তাহলে এই ধরনের ডিজিটাল সম্পর্ক খুব দ্রুত গাঢ় হয়ে যায়।
২. গোপনীয়তা ও “ডাবল লাইফ”
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ তার জীবনসঙ্গীর অজান্তেই অন্য একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। “হাইডেন চ্যাটস”, “ফেক আইডি”, “গোপন একাউন্ট” ইত্যাদি ব্যবহার করে অনেকে গোপনে ‘ডাবল লাইফ’ শুরু করে। এটি শুধু বিশ্বাসঘাতকতা নয়, বরং দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি চরম অবমাননা।
৩. ডিজিটাল পরকীয়া (Emotional Affair)
সব পরকীয়াই শারীরিক নয়। অনেক সময় একটি ভার্চুয়াল সম্পর্ক শুধু কথার মাধ্যমে আবেগঘন হয়ে ওঠে—যাকে বলে “Emotional Affair”। এই ধরনের সম্পর্ক ব্যক্তিকে মানসিকভাবে তার জীবনসঙ্গী থেকে দূরে সরিয়ে ফেলে, কারণ সে অনুভব করে অন্যজনই তাকে বেশি বোঝে বা মূল্যায়ন করে। এই মানসিক দূরত্বই শেষ পর্যন্ত বৈবাহিক সম্পর্ককে ভেঙে ফেলে।
৪. সন্দেহ, আস্থাহানি ও কলহ
যখন কোনো দম্পতির একজন সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকে, বারবার ফোন লুকায়, বা গোপন চ্যাট করে, তখন অপর পক্ষের মনে সন্দেহ তৈরি হয়। এই সন্দেহ যদি বারবার তৈরি হয় এবং তার পেছনে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে সম্পর্কের মধ্যে একধরনের বিষাক্ততা জন্ম নেয়। এই সন্দেহ ও বিশ্বাসের অভাব থেকেই শুরু হয় অবিশ্বাস, কলহ এবং শেষমেশ বিচ্ছেদ।

৫. বিবাহবিচ্ছেদের পরিসংখ্যান ও গবেষণা
অনেক দেশের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত। উদাহরণস্বরূপ:
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুক সম্পর্কিত বিবাদ বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনে প্রায় ৩০% ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়, যেখানে মেসেজ, ছবি বা অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ থাকে।
বাংলাদেশের মতো সমাজেও এই ট্রেন্ড বাড়ছে, যদিও অনেকেই প্রকাশ করতে চায় না।
সমাধান ও করণীয়
১. খোলামেলা যোগাযোগ: স্বামী-স্ত্রী যেন একে অপরের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে।
সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ঘনিষ্ঠতা এড়ানো।
বিশ্বাস ও সম্মান বজায় রাখা: সম্পর্কের প্রতি অঙ্গীকার এবং শ্রদ্ধা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
যেকোনো সমস্যা হলে বাস্তব আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা, পালানোর নয়।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে অনেক দরজা খুলে দিয়েছে, কিন্তু সেই দরজাগুলো যদি বিবাহিত জীবনের বাইরে নতুন সম্পর্কের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে তা ধ্বংস ডেকে আনবে। পরকীয়া শুধু একজন মানুষকে আঘাত করে না, এটি একটি পরিবার, এমনকি একটি প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই, ভার্চুয়াল জগতে না হারিয়ে বাস্তব সম্পর্ক রক্ষা করাই এখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সন্তান ও পারিবারিক জীবনে প্রভাব
বিবাহিত জীবনে শুধু স্বামী-স্ত্রী নয়, সন্তানরাও ভুক্তভোগী হয়। যদি মা-বাবা সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকে, তাহলে তারা সন্তানদের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে পারে না। এতে শিশুদের উপর মানসিক প্রভাব পড়ে, যা তাদের ভবিষ্যতের সম্পর্ক বা আচরণে নেতিবাচকভাবে প্রতিফলিত হয়। সন্তানদের শিক্ষা, অভ্যাস এবং মূল্যবোধ বিকাশে দম্পতির আন্তরিকতা এবং সময় দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সোশ্যাল মিডিয়া কেড়ে নিচ্ছে।
সন্তান ও পারিবারিক জীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব
সোশ্যাল মিডিয়া শুধু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কেই প্রভাব ফেলে না, বরং তা পুরো পারিবারিক জীবনে ও বিশেষ করে সন্তানদের উপরও গভীর প্রভাব রাখে। আজকের দিনে মা-বাবা যখন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ব্যস্ত, তখন শিশুরা ক্রমাগত অবহেলিত হচ্ছে। এই অবহেলা ধীরে ধীরে সন্তানদের মানসিক ও আচরণগত বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায়।
১. সময়ের অভাব ও আবেগগত দূরত্ব
অনেক বাবা-মা সন্তানদের সাথে সময় কাটানোর পরিবর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকে। এমনকি খাবার টেবিলেও মোবাইল স্ক্রলে চোখ, মুখে কথার কোনো গুরুত্ব নেই। এতে শিশুরা মনে করে, তারা অপ্রয়োজনীয় কিংবা তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলোর কোনো মূল্য নেই। দীর্ঘমেয়াদে এটি সন্তানদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং তারা একাকীত্ববোধে ভুগতে থাকে।
২. সন্তানের ভুল অভ্যাস গঠন
যখন সন্তানরা দেখে মা-বাবা সারাক্ষণ ফোন ব্যবহার করছেন, তখন তারাও সেই অভ্যাস গড়ে তোলে। অল্প বয়সে মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। এতে করে তারা বই পড়া, খেলাধুলা বা পারিবারিক মেলামেশা থেকে দূরে সরে যায়। এই ডিজিটাল আসক্তি ভবিষ্যতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে এবং একাডেমিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. পারিবারিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা নষ্ট হওয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় অশালীন কনটেন্ট, নেতিবাচক ভাষা বা অপসংস্কৃতির ছড়াছড়ি রয়েছে। বাবা-মা যদি সন্তানদের পর্যবেক্ষণ না করে, তাহলে তারা সহজেই এসব অনুপযুক্ত কনটেন্টের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। ফলস্বরূপ, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ থেকে তারা বিচ্যুত হয়।
৪. বাবা-মায়ের কলহ ও সন্তানের মানসিক চাপ
যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে কলহ হয়, তবে তা সন্তানের সামনে ঘটলে তারা ভয়, উদ্বেগ বা অপরাধবোধে ভোগে। পরিবারে ঝগড়া, দূরত্ব বা নিরবতা শিশুদের মনে নেতিবাচক ছাপ ফেলে, যা তারা বহন করে বড় হওয়ার পরেও।
৫. সন্তানদের প্রতি নজরদারির ঘাটতি
সোশ্যাল মিডিয়া মা-বাবার মনোযোগ এতটাই কেড়ে নেয় যে, সন্তানের দৈনন্দিন কার্যক্রমে নজর দেওয়া হয় না। কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে, কী দেখছে—এসব বিষয়ে অসচেতনতা তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। এতে শিশু-কিশোররা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের শিকার বা অংশীদারও হতে পারে।
সমাধান ও করণীয়
পরিবারে ‘স্ক্রিন ফ্রি টাইম’ নির্ধারণ করা—যেখানে সবাই একসাথে বসে গল্প করবে বা খেলবে।
সন্তানদের সামনে ইতিবাচক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে রোল মডেল হওয়া।
সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত আবেগগত যোগাযোগ ও তাদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
মোবাইল ব্যবহারে সীমা নির্ধারণ ও বয়স অনুযায়ী প্যারেন্টাল কন্ট্রোল রাখা।
সন্তানের প্রতিটি কাজের প্রতি সজাগ দৃষ্টি ও সংলাপ বজায় রাখা।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সচেতনতা না থাকলে তা শুধু দাম্পত্য সম্পর্কই নয়, পুরো পরিবারের স্থিতি নষ্ট করতে পারে। শিশুদের জন্য সুস্থ মানসিক ও আবেগগত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য মা-বাবার দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে ভারসাম্য রেখে পারিবারিক বন্ধন জোরদার করতে হবে। পরিবার হলো ভালোবাসার প্রথম পাঠশালা—তাকে মোবাইলের স্ক্রিনের আড়ালে হারিয়ে যেতে দেওয়া উচিত নয়।
সমাধান ও করণীয়
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব একেবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করা আবশ্যক। নিচে কিছু করণীয় উপায় তুলে ধরা হলো:
বিশ্বাস গড়ে তুলুন: দম্পতিরা একে অপরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন।
নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন: মোবাইল ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়ার বদলে একে অপরের সাথে মুখোমুখি কথা বলুন, সময় কাটান।
গোপনীয়তা বজায় রাখুন: পারস্পরিক সম্মতি ছাড়া ব্যক্তিগত কিছু পোস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।
পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন: সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে দিন, যেন পারিবারিক সময় ব্যাহত না হয়।
আসক্তি থেকে বিরত থাকুন: প্রয়োজনে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া বিরতি নিন।
পরিবারের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করুন: সবকিছুর আগে পরিবার এবং জীবনসঙ্গীকে প্রাধান্য দিন।
উপসংহার
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে অনেক সুযোগ এনে দিয়েছে, কিন্তু সেই সুযোগ যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয়, তবে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিবাহিত জীবনে প্রেম, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, এবং যোগাযোগ—এই চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ব্যবহার এই স্তম্ভগুলোকে দুর্বল করে দেয়।
তাই বলা যায়, সোশ্যাল মিডিয়া মানব জীবনে যেমন আশীর্বাদ, তেমনি অভিশাপও হতে পারে। বিবাহিত জীবনে এই ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। প্রযুক্তিকে দোষ না দিয়ে আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে এবং প্রাধান্য দিতে হবে বাস্তব সম্পর্ককে, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং অর্থবহ।
বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য ,সেবা এবং পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন গুলশান মিডিয়ার সাথে।
” কল করুন: 01711246075 Email : gulshanmedia2@gmail.com